বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১০:৫৯ অপরাহ্ন

টাকা ছাড়া দলিল করেন না সাব-রেজিস্ট্রার

টাকা ছাড়া দলিল করেন না সাব-রেজিস্ট্রার

স্বদেশ ডেস্ক: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ- ঘুষ ছাড়া কোনো দলিল পাস করেন না তিনি। যোগদানের পর থেকেই দলিলপ্রতি দেড় হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে আসছেন। নিরুপায় জনগণ ও দলিল লেখকরা জিম্মি তার কাছে।

এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনও হয়েছে কয়েক দফা; কাজ হয়নি। উল্টো পাঁচ দলিল লেখক সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। আর অদৃশ্য ক্ষমতাবলে পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তিনি। নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছেন ‘ঘুষবাণিজ্য’। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় আলোচনায় এসেছেন নতুন করে।

গত ১৫ আগস্ট রাতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি সোহেল রানা তার ফেসবুক আইডি থেকে ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তার পর থেকে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত আইডিতে ইনবক্স ও শেয়ারের মাধ্যমে দ্রুত এটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে সমালোচনার ঝড় উঠতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

একাধিক দলিল লেখক ও জমির ক্রেতার অভিযোগ, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শাহজাদপুরে যোগদানের পর থেকেই দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে শাহজাদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, যেখানে হেবার ঘোষণাপত্র দলিলের জন্য সরকারি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪০ টাকা। সেখানে সরকারি ফি ছাড়াও প্রতিটি দলিলের জন্য সর্বনিম্ন উৎকোচ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

শাহজাদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দলিলপ্রতি কমপক্ষে ১৫০০ টাকা দিতে হয়। না দিলে নানা সমস্যা সৃষ্টি করা হয়। আর এই টাকাগুলো সাব-রেজিস্ট্রারের পক্ষে গ্রহণ করেন সুমন নামে এক নকলনবিশ। এ ব্যাপারে সুমনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সদুত্তর দিতে না পেরে বলেনÑ এ বিষয়ে স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আসা এক ভুক্তভোগী কায়েমপুর ইউনিয়নের ব্রজবালা গ্রামের মো. মানিক বলেন, আমি একটি হেবার ঘোষণাপত্র দলিল রেজিস্ট্রি করতে এলে প্রথম দিন আমাকে নানা অজুহাতে দলিল রেজিস্ট্রি না করে পরে আবার আসতে বলেন। আমি পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ প্রদান করায় রাজি হলে আমার দলিলটি রেজিস্ট্রি করে দেন।

এদিকে শাহজাদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাস ও সুমনের অবৈধ উৎকোচ বিনিময়ের ভিডিও হাতে আসে কয়েকদিন আগেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়Ñ সুব্রত কুমার দাস নিজেই এক দলিল লেখকের কাছ থেকে উৎকোচ হিসেবে ১৫০০ টাকা নিচ্ছেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছেÑ একটি দলিলের উৎকোচ বাবদ আনিসকে প্রথমে ৩ হাজার টাকা দিলে তিনি ওই দলিল লেখককে বলেন, ‘স্যার ৩ হাজার ৫০০ টাকা দিতে বলেছেন।’ পরে দলিল লেখক টাকা না দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারকে ফোন দিতে বললে আনিস সঙ্গে সঙ্গে সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাসকে ফোন দিয়ে কথা বলে ৩ হাজার টাকা ফেরৎ দিয়ে বলেন, ‘৩ হাজার ৫০০ টাকার কমে হবে না।’ বাধ্য হয়ে ওই দলিল লেখক ৩ হাজার ৫০০ টাকাই দেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মো. সোহেল রানা বলেন, আমি নিজে তাকে দলিল সম্পাদনের জন্য কয়েক দফা উৎকোচ দিয়েছি। আমি বিষয়টি প্রকাশ করায় আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমি জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাস বলেন, আমি বা আমার অফিসে কোনো প্রকার ঘুষ নেওয়া হয় না। যেসব ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেগুলো আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানোর জন্য করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, শাহজাদপুরের সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাসের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি আমার নজরে আসার পর আমি গত বুধবার সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছি। ভাইরাল হওয়া যেসব ভিডিও ও ছবি হাতে এসেছে, তার কিছু অংশের সত্যতা রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, তদন্ত রিপোর্টটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে আমি শুনেছি। বিষয়টি বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877